বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী

হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সংগ্রামের সঙ্গে যার নাম স্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রিয় পাঠক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী বলে শেষ করা যাবেনা। চলুন তাহলে সংক্ষিপ্ত আকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী আলোচনা করা যাক। আমার পুরো পোস্টটি জুড়ে থাকছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী। আপনি যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পুরো পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কারণে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ভালোবেসে তাকে ' বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেছে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই মহামানবের জীবনী সম্পর্কে । আজকে এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী সম্পর্কে। আমরা সকলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী সম্পর্কে নিজেরা জানবো এবং অন্যকে জানতে সাহায্য করবো।

সূচিপত্রঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী

জন্ম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মধুমতি নদীর তীরবর্তী ছায়া ঢাকা এই গ্রামে পিতা মাতার কোল আলোকিত করেছে শিশুটির জন্ম হয় সেই শিশুটিকে তাকে তার জনক জননী অর্থাৎ পিতা-মাতা ' খোকা' বলে ডাকতেন। এবং তার পুরো নাম ছিল শেখ মুজিবুর রহমান।

বংশ পরিচয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম যে পরিবারে তা শেখ পরিবার হিসেবে সমগ্র এলাকায় পরিচিত ছিল। টঙ্গীপাড়ায় শেখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শেখ বোরহান উদ্দিন। তার পূর্বপুরুষ সেক আউয়াল ছিলেন শেখ মুজিবুরের অষ্টম পূর্বপুরুষ।

বিবাহ

১৮ বছর বয়সের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেগুন ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার দুই মেয়ে শেখ রেহানা এবং শেখ হাসিনা। এবং তার তিনটি ছেলে ছিল শেখ কামাল , শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।

শিক্ষা জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখাপড়া শুরু নিজ গৃহে। ১৯০০ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ছাত্র জীবনের সূচনা হয়। এরপর গোপালগঞ্জের একাডেমি এবং পরে পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরে ইসলামিয়া হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করা হয়। এ সময় মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন এবং তার চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

 কলকাতা মেডিকেল কলেজের চোখ অপারেশনের পর এবং এরপর প্রায় তিন বছর তার লেখাপড়া বন্ধ থাকে। এই সময় থেকেই তিনি চোখে চশমা পড়তে শুরু করেন যা আজীবন অব্যাহত ছিল । তার গৃহ শিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আব্দুল হামিদ মাস্টার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিতে আসার পেছনে তার মাস্টার সাহেবের প্রভাব ছিল বলে মনে করা হয়।

চোখের অসুখের কারণে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন প্রায় চার বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩৭ সালে তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল এবং এখান থেকে ১৯৪২ সালে তিনি এন্টার্স  পরীক্ষায় পাস করেন। হাই স্কুলের ছাত্র অবস্থায় শেখ মুজিবুর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে এবং বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং একাধিকবার গ্রেফতার হন।

সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা কালীন স্কুল পরিদর্শন করতে আসা সেকালের দুইজন দেশ বিখ্যাত নেতা এবং মন্ত্রী শেরে বাংলায় একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরা ওয়ার্ডটির পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে সঙ্গীতসহ শেখ মুজিবুর রহমান দাবি এবং প্রখ্যাত এই দুই নেতার নজর করেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় দেশ নেতা শেখ মুজিব।

পরবর্তী শিক্ষা জীবন তিনি শুরু করেন কলকাতা শহরে। ১৯৪৭ সালে তিনি বিয়ে পাস করেন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং কারাগার বরণ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করায় এবং জরিমানা দিতে অস্বীকার করায় কর্তৃপক্ষ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। শিক্ষা জীবন অসমাপ্ত থেকে যায়।

রাজনৈতিক জীবন

কলকাতায় থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন , ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেলে অবস্থানকালে শেখ মুজিব তৎকালীন অভিভক্ত বাংলা মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা শেরে বাংলা, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু , মাওলানা ভাসানী এসেছিলেন । ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ গঠনের সময় তিনি কারা কারা বন্দী থাকা অবস্থায় সংগঠনের যুগ্ন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রী হিসেবে।

১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মির্জা এক অধ্যাদেশ বলে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করে দেখে মার্সাল ল জারি করেন এবং প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। কিছুদিন পরেই আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট ইসকান্দার মির্জা কে ক্ষমতাচুত্য করেন। শেখ মুজিবুর সহ অপর আপন নেত্রীবৃন্দ থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান নির্দোষ প্রমাণিত হলে ১৯ ৫৯ সালে ১৭ই ডিসেম্বর তাকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

৭০ এর নির্বাচন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা

নতুন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মধ্যস্থতায় ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। এই আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানী সামরিক সরকার তালবাহানা শুরু করে। শুরু হয় নতুন ধরনের এক ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দেশব্যাপী গণজোয়ার যা ক্রমে আন্দোলনের রূপ নেই।

 ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন-' প্রত্যেক গ্রামে , প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক । রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ । এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম'। এরপর ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে ঘুমন্ত ঢাকা বাসির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণ , নারকীয় হত্যাকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন -This is may be my last messege . From today Bangladesh is independent. 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার এই ভাষণটি মাধ্যমে সারাদেশে প্রচার করা হয় । এবং তার প্রেরিত এই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। মৃত্যুকে তুচ্ছ কেন করে দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে বাঙালি আর্মি , পুলিশ, আনসার, পিপিআর সহ লক্ষ লক্ষ যুবক তরুণীরা অস্ত্র আর ট্রেনিং এর জন্য পাড়ি জমায় প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে। মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ।

২৬ শে মার্চ এ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা

২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন । এই ঘোষণাটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্য ঘটনা। বঙ্গবন্ধু তার সেই স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছিলেন-' এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা , আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাচ্ছি যে , যেখানে আছে , যার যা কিছু আছে , তাই নিয়ে রুখে দাড়াও , সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী শেষ শূন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও'।

জাতির জনক উপাধি লাভ

১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ছাত্রলীগ আয়োজিত বন্টনের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা হিসেবে প্রথম অভিহিত করা হয় । এবং স্বাধীনতার পর সরকার তাকে জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও শাসন ক্ষমতা

স্বাধীনতার পর দশই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাঙালি জনপ্রিয় নেতা বীরের মতন প্রত্যাবর্তন করেন স্বদেশের মাটিতে । সেদিনও লক্ষ লক্ষ জনতা তাকে আনন্দ অস্ত্র দিয়ে স্বাগত জানাই স্বাধীন বাংলার রক্তাক্ত মাটিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন । 

যুদ্ধ বিদ্ধস্থ দেশকে গড়ে তোলার জন্যঅক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই তিনি প্রতিনিয়ত নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে শুরু করেন। হত্যা , সন্ত্রাস , লুটতরাজ , আর অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশে একটি বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছিল । কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন এসবের বিরুদ্ধে শক্তিকে প্রতিরোধ করে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই দেশি-বিদেশী স্বাধীনতা বিরোধী চকলেট ষড়যন্ত্রের বিভ্রান্ত সেনা কর্মকর্তার দ্বারা নির্মমভাবে পরিবার পরিজনসহ তিনি ১৯৭৫ সালে ৭৫ আগস্ট ভোর রাতে নিহত হন । এবং এই দিন আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের এই মহান নেতাকে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী আমাদের প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন । তার অবদানের কারণে তিনি বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী পর্যালোচনা করলে জানা যায় তিনি ছোটকাল থেকেই অন্যায়  ,অত্যাচার  শাসন শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন নিজের জীবন বাজিয়ে রেখে । তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত মহামানব , আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী জানা এবং অন্যকে। আশা করছি এই পোস্টের মাধ্যমে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী আপনাদের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url