মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত - মাগরিবের নামাজের নিয়ম

আল্লাহ পাক আমাদের উপর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।তাই সঠিকভাবে এই নামাজ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।আজ আপনাদের এ পোস্টের মাধ্যমে জানাবো মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও মাগরিবের নামাজের নিয়ম।

আপনারা যদি সঠিকভাবে মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত ও মাগরিবের নামাজের নিয়ম জানতে চান তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।কারণ এই পোস্টটি ভালভাবে পড়ার মাধ্যমে আপনি সঠিকভাবে জানতে পারবেন মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত এবং মাগরিবের নামাজের নিয়ম এর পাশাপাশি মাগরিবের নামাজের নিয়ত,মাগরিবের নামাজের পর আমল , মাগরিবের নামাজের পর তাসবীহ সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পোস্টটি শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃমাগরিবের নামাজ কয় রাকাত - মাগরিবের নামাজের নিয়ম

মাগরিবের নামাজের ইতিহাস

মাগরিবের নামাজের ইতিহাস বা সর্বপ্রথম এবং তারপর কোন নবী এই নামাজ আদায় করেছিলেন , কি কারনে এই মাগরিবের নামাজ আদায় করেছিলেন এসব বিষয় অনেকেরই অজানা , কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে এই সকল বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে রাখা আমাদের সকলেরই উচিত। তাই এখন আমরা মাগরিবের নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানবো। যারা মাগরিবের নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না তারা এ বিষয়টি এখনই ভালোভাবে জেনে নিন।

প্রথমত হযরত ঈসা (আঃ) -এ নামায পড়েছিলেন। নাসারাগণ তাঁকে দোষী করেছিল। আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করেছিলেন বলে শোকরিয়া স্বরুপ তিনি মাগরিবের তিন রাকাত নামায আদায় করেছিলেন। দ্বিতীয়ত বা হযরত ইয়াকুব (আঃ)ও এ নামায পড়েছিলেন। কেননা তার পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর জন্য রোদন করতে করতে তার চক্ষুদ্বয় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যখনই হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কোর্তা তাঁর চক্ষে বুলানো হলো তখনই তাঁর চক্ষু ভালো হয়ে তিনি দৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে গেলেন। সে সময় তিনি তিনটি নেয়ামত পাওয়ার শোকরিয়া স্বরুপ মাগরিবের সময় তিন রাকাত নামায পড়েছিলেন। সে নেয়ামত তিনটি এই: (১) চক্ষুদ্বয় ভাল হয়ে যাওয়া, (২) হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে জীবিত পাওয়া, (৩) হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে ইসলামের উপর পাওয়া। তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে খুশি হয়ে আমাদের (উম্মতে মুহাম্মদী) উপর ঐ নামা্য ফরয করেছেন।

মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত

অধিকাংশ মানুষই মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত বিষয়টি জানেন , কিন্তু তারপরেও আরো একবার ভালোভাবে জানানোর জন্য, এখন আপনাদের বলব মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত। যারা মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত বিষয়টি জানেন না, তারা ভালোভাবে জেনে নিন। মাগরিবের নামাজ হলো মোট ৭ রাকাত। এই সাত রাকাত মাগরিবের মধ্যে রয়েছে ,

  • তিন রাকাত ফরজ নামাজ
  • দুই রাকাত সুন্নত নামাজ
  • দুই রাকাত নফল নামাজ

মাগরিবের সময় ফরজ , সুন্নত এবং নফল মিলিয়ে মোট ৭ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। অনেকে মাগরিবের শুধু ফরজ তিন রাকাত এবং সুন্নত দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং নফল নামাজ না পড়লে যেহেতু গুনাহ হয় না তাই এই দুই রাকাত নামাজ ছেড়ে দেন ,তবে কেউ যদি মাগরিবের সময় ফরজ এবং সুন্নত নামাজের সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন তাহলে , অশেষের অধিকারী হতে পারবেন। আশা করি মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

মাগরিবের নামাজের নিয়ত

মাগরিবের নামাজ আদায়ের পূর্বে সকলের উচিত ভালোভাবে মাগরিবের নামাজের নিয়ত জেনে নেওয়া। যারা সঠিকভাবে এবং ভালোভাবে মাগরিবের নামাজের নিয়ত জানেন না তারা অবশ্যই ভালোভাবে মাগরিবের নামাজের নিয়ত জেনে নিন। আপনাদের জন্য মাগরিবের ফরজ ,সুন্নত এবং নফল নামাজের নিয়ত জেনে নিন।

মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত নামাযের নিয়তঃ" নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহ তা'আলা ছালাছা রাকায়াতি ছালাতিল মাগরিবি ফারযুল্লহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।"
মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাযের নিয়তঃ"নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহ তাআলা রাকায়াতাই ছালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু রাসুলুল্লাহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।"
মাগরিবের দুই রাকাত নফল নামাযের নিয়তঃ"নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহ তাআলা রাকায়াতাই ছালাতিল মাগরিবি নফলে রাসুলুল্লাহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।"

মাগরিবের নামাজের নিয়ম

যথাযথা ভাবে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য ,মাগরিবের নামাজের নিয়ম জেনে নেয়া খুবই জরুরি।সঠিক নিয়ম না জেনে নামায পড়লে ,নামায শুদ্ধ হবে না। আপনারা উপরের অংশে মাগরিবের নামাজে কয় রাকাত এবং মাগরিবের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনেছেন , এবার সঠিক ভাবে জেনে নিন মাগরিবের নামাজের নিয়ম।যারা মাগরিবের নামাজের নিয়ম জানেন না তাদের জন্য মাগরিবের নামাজের নিয়ম নিচে দেয়া হলো।

মাগরিবের ফরয নামাজের নিয়মঃ মাগরিবের ৩ রাকাত নামাজ পড়ার জন্য প্রথমে পাক পবিত্র অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে জায়নামাজে দাঁড়াতে হবে এবার মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলে , ছেলেমানুষ হলে কানের লতি পর্যন্ত এবং মেয়ে হলে ঘাড় পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছেলেরা -নাভির উপরে এবং মেয়েরা বুকের ,ওপরে ডান হাতের ওপরে বাম হাত বাঁধবে। এরপর সানা , সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা অথবা কোরআনের অন্ততপক্ষে তিন আয়াত পাঠ করে রুকুতে যাবে। এরপর রুকু তাসবিহ পড়তে হবে , রুকুর তাসবিহ পড়া হয়ে গেলে, সোজা হতে হতে বলতে হবে-'সামি আল্লাহু লিমান হামিদা' সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে -'রাব্বানা লাকাল হামহ' বলার পরে 'আল্লাহু আকবার' বলে সেজদায় যেতে হবে।সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়তে হবে, এরপর মাথা তুলে দুই সেজদার মাঝখানে দোয়া পড়ে আবার সেজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়তে হবে।

আরো পড়ুণঃ আযানের জবাব দেয়ার গুরুত্ব।

এভাবে প্রথম রাকাত নামাজ শেষ হলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়িয়ে একই নিয়মে সূরা ফাতিহার পরে অন্য একটি সূরা অথবা কুরআনের কমপক্ষে তিন আয়াত পাঠ করে যথা নিয়মে রুকু সেজদা করতে হবে। এরপর দুইবার সেজদা করা হয়ে গেলে প্রথম বৈঠক করতে হবে। দুই রাকাত নামাজের পর প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পাঠ করে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। মাগরিবের ফরজ নামাজ পড়ার সময় তৃতীয় রাকাতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পড়ে রুকুতে যেতে হবে এরপর আগের নিয়মের উপর তাসবিহ পড়ে রুকু থেকে উঠতে হবে এরপর সেজদায় গিয়ে যথা নিয়মে সেজদার করা হয়ে গেলে এবার শেষ বৈঠক করতে হবে  ,শেষ বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াতু , দরুদ ,দোয়া মাসুরা পড়ার পরে প্রথমে ডান দিকে তারপরে বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ শেষ করতে হবে।

মাগবিবের দুই রাকাত সুন্নত ও নফল নামাজের নিয়মঃ মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার জন্য, প্রথমে দুই রাকাত নামাজের নিয়ত করে তাকবীরে তাহরিমা বাঁধতে হবে এরপর সানা , সূরা ফাতিহা , অন্য কোন সূরা অথবা কুরআনের ৩ আয়াত পড়ার পরে যেতে হবে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যেতে হবে এবং প্রথম সেজদা ও দ্বিতীয় সেজদা করার পরে আবার একই নিয়মে উঠে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য সুরা কেরাত পড়ে রুকু ,সেজদা করতে হবে এবং আত্তাহিয়াতু , দরুদ , দোয়া মাসুরা পড়ার পরে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হবে।
এবং মাগরিবের দুই রাকাত নফল নামাজও এই একই নিয়মে করতে হবে শুধু ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার সময় সুন্নত নামাজের নিয়ত করতে হবে আজ নফল নামাজ পড়ার সময় দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। রাখবেন শুধুমাত্র প্রথম রাখার শুরুর সময় তাকবীরে তাহরিমার পরে 'সানা' পড়তে হবে পরের যাকাত গুলোতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা মিলিয়ে যথা নিয়মে নামাজ শেষ করতে হবে। আশা করছি মাগরিবের নামাজের নিয়ম বুঝতে পেরেছেন।

মাগরিবের নামাজের পর তাসবিহ

মাগরিবের নামাযের পরে আমল করার কয়েকটি তাসবিহ রয়েছে, যে তাসবিহগুলো পাঠ করার মাধ্যমে অসংখ্য নেকি লাভ করা যায়।মাগরিবের নামাজের পর তাসবিহ গুলো কি আপনার জানা আছে? মাগরিবের নামাজের পর তাসবিহ গুলো যদি না জেনে থাকেন তাহলে এখুনি জেনে নিন। মাগরিবের নামাজের পর পড়তে হবে

ইয়া গাফুরুর রাহিম - ১০০ বার এবং সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়তে হয়।শুধু  মাগরিবের নামাযের পর না ৫ ওয়াক্ত নামাযের পরই সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লহু আকবার পড়তে হয় এবং এরপর ১ বার পড়তে হয় -"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু হয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদির"।

আরো পড়ুনঃ চুল কাটার ইসলামিক তরিকা

মন্তব্য, আশা করছি এতক্ষণের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত এবং মাগরিবের নামাজের নিয়ম সহ মাগরিবের নামাজ পর বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং তাসবীহগুলো।আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত নামাজের তৌফিক দান করুন (আমিন)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url