ভিটামিন এ এর কাজ - ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা
আলোচনায় যা যা থাকছে ঃ ভিটামিন এ এর কাজ - ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন এ এর কাজ
- ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
- ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
- এ এর অভাবজনিত রোগ
- ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা
- ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা
ভিটামিন এ
ভিটামিন এ হল শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ধরনের উপাদান যার রাসায়নিক
নাম হলো " রেটিনাল"। ভিটামিন এ হলো এক প্রকারের জৈব অনু, যে অনুটি বিভিন্ন
খাবারের মাধ্যমে আমরা পেতে পারি। বিভিন্ন খাবার ছাড়াও সাপ্লিমেন্টারি
হিসেবেও ভিটামিন এ ক্যাপসুল পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা
ভিটামিন এই ক্যাপসুল পেতে পারি। বিশেষ করে হলুদ ,সবুজ অথবা রঙ্গিন শাকসবজিতে
ভিটামিন এ এর মাত্রা বেশি থাকে। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করা ,
দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ভিটামিন এর প্রধান
কাজ। তবে এ কাজগুলো ছাড়াও ভিটামিন এ শরীরের আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ
করে।
ভিটামিন এ এর কাজ
শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন এ এর ভূমিকা অনেক বেশি। ভিটামিন এ আমাদের শরীরে বেশ
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশগ্রহণ করে থাকে। শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণ করার
আগে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে শরীরে ভিটামিন এ এর কাজ গুলো কি। আপনার যদি এই
গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনটির কাজ সম্পর্কে জানা না থাকে তাহলে, সে বিষয়টি এই পোস্টটি
আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। আপনি যদি ভিটামিন এর কাজ না জানেন তাহলে এখনই শরীরে
ভিটামিন এ এর কাজ সম্পর্কে জেনে নিন। নিয়ে নিচে ভিটামিন এ এর কাজগুলো তালিকা
আকারে উপস্থাপন করা হলো। শরীরে ভিটামিন এ যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে
সেগুলো হলো,
- ভিটামিন এ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- ভিটামিন এ ত্বক ,অস্থি অস্থি ও কোষ গঠন করতে ভূমিকা রাখে
- ভিটামিন এ প্রজনন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে
- নির্জিত ত্বকে প্রাণ ফিরিয়ে দেয় ভিটামিন এই
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন এ
- ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম করে ভিটামিন এ
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
আমরা আগে জেনেছি যে ভিটামিন এ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে সাহায্য
করে এই কারণে আমাদের উচিত ভিটামিন এ এর ঘাটতি যেন কোনভাবেই আমাদের শরীরে না
পড়ে। এই বিষয়টি সমাধান করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গুলো
সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। কারণ বিয়ে জাতীয় খাবার গুলো খাওয়ার মাধ্যমে আমরা
আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হব। তবে শর্ত হলো ভিটামিন এ এর
চাহিদা পূরণ করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে বা জেনে রাখতে হবে ভিটামিন এ
জাতীয় খাবার গুলোর নাম সম্পর্কে। যখন আমরা জানতে পারবো কোন কোন খাবারগুলোতে
ভিটামিন এ রয়েছে ঠিক তখনই এই খাবারগুলো গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরে
ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ
একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন এ এর
সর্বনিম্ন চাহিদা হল যথাক্রমে-পুরুষের জন্য ৯০০ মাইক্রগ্রাম এবং পূর্ণবয়স্ক
মহিলাদের জন্য ৭০০ মাইক্রগ্রাম। ভিটামিন এ এর চাহিদাগুলো পূরণের জন্য আমরা যে
খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারি সে সেগুলো হলো,
- পাকা পেঁপে
- আম
- টমেটো
- লাল শাক
- লেটুস
- পালং শাক
- গরুর কলিজা
- খাসি এবং মুরগির কলিজা
- ব্রকলি
- ডিম
- গাজর
- কুমড়া
- পাতাকপি
- লাল মরিচ
- ছোট মাছ
- দুধ
- কড লিভার অয়েল
- ঘি
- মিষ্টি আলু
- সরিষার শাক
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
তোমরা জেনে নিব ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে না জানেন তাহলে, বিষয়টি এই পোস্টের
মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
এবং ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার বয়স সম্পর্কে। শিশুদেরকে সাধারণত ৬ মাঠ থেকে
শুরু করে পাঁচ বছর পর্যন্ত বছরের বিভিন্ন সময় ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন গুলোর
মাধ্যমে, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়ে থাকে।
আপনার শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ভিটামিন এ ক্যাপসুল
খাওয়ার নিয়ম-কানুন গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল
খাওয়ার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন খালি পেটে কোনভাবে খাওয়া না
হয়। খালি পেটে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খেলে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ
পোষ্টের এই অংশটিতে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হলো ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ
সম্পর্কে। আমাদের অনেকের ধারণা না থাকতে পারে, ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ গুলো
সম্পর্কে। তাই আমরা এবার জেনে নেব ভিটামিন এ এর অভাবে কোন কোন রোগগুলো শরীরে বাসা
বাঁধতে পারে। আপনার যদি ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ গুলো সম্পর্কে আইডিয়া বা
ধারণা না থাকে তাহলে অবশ্যই বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নিন এবং শরীরে ভিটামিন এ এর
ঘাটতি সম্পর্কে সচেতন হন।
শরীরে ভিটামিন এ জনিত কারণে প্রধানত যে রোগটি হয়ে থাকে সেটি হল
' রাতকানা '। এই রাতকানা রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর রোগীরা দিনের বেলাতে
বা সূর্যের আলোতে স্বাভাবিক মানুষের মতই চলাফেরা বা দেখতে পাই কিন্তু রাতের
অন্ধকারের সাথে সাথে বা সূর্যের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথে চোখে কম দেখে অথবা
একেবারেই দেখতে পাই না।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া কমানোর উপায়
এছাড়াও ভিটামিন কে অভাবজনিত কারণে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, এই
রক্তশূন্যতার রোগটি সাধারণত মেডিকেল সায়েন্সে অ্যানিমিয়া নামে পরিচিতি। ভিটামিন
এ অভাবজনিত কারণে শরীরের ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং হতে পারে স্কিন
ক্যান্সারের মতন সমস্যা। ভিটামিন এর অভাব হলে লিভারের বিভিন্ন ধরনের অসুখ
হতে পারে, মেয়েদের নিয়মিত মাসিক সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং শরীরে
লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা
ভিটামিন এ শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কথাটি আমরা আগেও জেনেছি এবার আমরা
জন্ম ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর উপকারিতা সম্পর্কে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের
মাধ্যমে আপনি যে সকল উপকারিতা গুলো পাবেন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে
বিষয়টি হলো শরীরে ভিটামিন এর চাহিদা বা ঘাটতি পূরণ হওয়া। দৈনিক শারীরিক
চাহিদার যে অংশটিতে ভিটামিন এ এর অভাব থাকে, ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের
মাধ্যমে এই অভাবটি আমরা পূরণ করে ফেলতে পারি।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল যখন আমরা গ্রহণ করবো তখন শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি থাকবে না
এবং যার ফলে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা রাতকানা রোগ থেকে
মুক্ত থাকতে থাকতে পারবো। এছাড়াও ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের পরে শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের ফলে শরীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে
জীবাণু সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণ করলে ত্বকের জেলা বৃদ্ধি
পাবে এবং এটি আমাদের কোষ এবং অস্থির গঠন করতে সাহায্য করবে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের ফলে শরীরে ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি, ভিটামিন এ ক্যাপসুল শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত বা ইনফেকশন ভালো করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের ফলে শরীরে যে কোন ধরনের কাটা বা ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা
যেকোনো ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে হয়তো বা পার্থক্য এটুকুই যে কোন
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একটু বেশি বা মারাত্মক আর কোন ঔষধের পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া একটু কম। ভিটামিন এ জাতীয় ক্যাপসুলের মারাত্মক বা জটিল কোন
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও, শারীরিক চাহিদার অনুপাতে যদি ভিটামিন এ
ক্যাপসুল গ্রহণের মাত্রা বেশি হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আপনি বেশ কিছু সমস্যা
উপলব্ধি করবেন। ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা গুলো মারাত্মক বা অত্যন্ত ক্ষতির
কারণ না হলেও সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এবার আমরা জানব ভিটামিন
এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার কি কি সমস্যা
হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন এ ক্যাপসুল এর অপকারিতা গুলো
আপনি যদি চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ভিটামিন এই ক্যাপসুল গ্রহণ করেন তাহলে, আপনার
শরীরে ক্লান্তি আসতে পারে এবং আপনি দুর্বলতা অনুভব করতে পারেন। ভিটামিন এ
ক্যাপসুল গ্রহণের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে গর্ভবতী নারীদের জন্য এবং গর্বের
সন্তানের জন্য এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্যাপসুল এর মাত্রা বেশি হওয়ার
কারণে অনেক সময় পেট ব্যথা ,মাথাব্যথা , চোখে ঝাপসা দেখা , হাত দেওয়া রুচি ,
মাথা ঘোরা সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা হতে দেখা যায়।
অতিরিক্ত ভিটামিন এ ক্যাপসুল গ্রহণের ফলে আপনার ত্বক ও ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যেতে পারে
এবং ঘন ঘন ঠোঁট এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়ার অসুবিধা হতে পারে। ভিটামিন এর অপকারিতা
হিসেবে অনেক সময় হাতের নখের ভঙ্গুরতা বেড়ে যেতে পারে ,অতিরিক্ত ঘাম হতে
পারে এবং চুল পড়ার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে মাথার বিভিন্ন
স্থান ফুলে যেতে পারে এবং বাচ্চাদের স্বাভাবিক রোধ কমে যেতে পারে এর সাথে সাথে
দেখা দিতে পারে রক্তস্বল্পতা। স্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়ার সমস্যাটি অনেক সময় দেখা
দেয়। ভিটামিন এ ক্যাপসুল অতিরিক্ত খেলে লিভারের ওপরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে
এবং যারা ধূমপান করে তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের মাত্রা দীর্ঘ ক্যান্সার
এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
মন্তব্য, আপনি যদি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন
তাহলে অবশ্যই ভিটামিন এ এর কাজ সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ভিটামিন এ
ক্যাপসুলএর উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে গেছেন। শরীরে ভিটামিন এ এর
ঘাটতির ফলে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় সুতরাং সকলের উচিত শরীরে
ভিটামিন এর ঘাটতি যাতে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। তবে ভিটামিন এ এর ঘাটতি
পূরণে জন্য সাপ্লিমেন্টারি ঔষধ গুলো গ্রহণ না করে সবচাইতে ভালো হয় যদি
খাদ্যের মাধ্যমে শরীরের এই ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করা যায় তাহলে। কারণ
সকল ধরনের ওষুধ কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url