প্রেসার লো হলে করণীয়
হাই প্রেসার এর মতন লো পেশারও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল সমস্যা। লো প্রেসার এর কারণেও অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক কে প্রাণ নাশের মতন ঘটনাও ঘটতে পারে। এ কারণে প্রেসার লো হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং প্রেসার লো হলে করণীয় বিষয়গুলো ঠিকঠাক মতন মেনে চলুন।
সূচিপত্রঃ প্রেসার লো হলে করণীয়
- প্রেসার লো হলে করণীয়
- স্পেশাল লো হলে কি হয়
- প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে
- প্রেসার লো হওয়ার কারণ
- লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়
- গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে করণীয়
প্রেসার লো হলে করণীয়
প্রেসার লো হওয়া মানে রক্তের চাপ নিম্নমুখী হওয়া বা কমে যাওয়া। হাই ব্লাড
প্রেসার এর নতুন লো ব্লাড প্রেসারও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। যেকোনো বয়সের এবং
যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যের মানুষই লো ব্লাড প্রেসার এর রোগী হতে
পারেন। লো ব্লাড প্রেসার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই এই পোষ্টের মধ্যে
দিয়ে আপনি আজকে জেনে নিতে পারবেন প্রেসার লো হলে করণীয় সম্পর্কে। চলুন
তাহলে জেনে আসি প্রেসার লো হলে করণীয় সম্পর্কে।
খালি পেটে না থাকাঃ লো ব্লাড প্রেসার এর রোগীদের জন্য সর্বপ্রথম সাজেশন
হলো দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে বা খালি পেটে না থাকা। কারণ না খেয়ে থাকার কারণে শরীর
দুর্বল হবে এবং যার ফলে প্রেসার লো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ কারণে লো
প্রেসার এর রোগীদের ঘন ঘন কিছু না কিছু খেতে বলার উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে।
পর্যাপ্ত পানি পানঃ লো প্রেসারের রোগীদেরকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করতে
হবে, কারণ পর্যাপ্ত পানি পান রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ঃ
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়।
লবণঃ হাই প্রেসার এর রোগীদের জন্য লবণ খাওয়া যেমন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় লো প্রেসারের রোগীদের ক্ষেত্রে এর ঠিক উল্টোটা দেখা যায়। লবণ রক্তের চাপ বাড়াতে সাহায্য করে এ কারণে যারা লো প্রেসারের সমস্যা তারা খাবার সময় এক চিমটি লবণ বেশি খেতে পারেন। অথবা যখনি আপনার মনে হবে প্রেসার লো হয়ে যাচ্ছে তখন একটু লবণ যে কোন উপায়ে খেয়ে নিন।
একইভাবে শুয়ে বসে না থাকাঃ লো প্রেসারের রোগীদের একইভাবে বেশিক্ষণ একই
স্থানে বা নড়াচড়া না করে শুয়ে বা বসে থাকা টি খারাপ। আপনি যখন হাঁটাচলা করবেন
তখন রক্তের চাপ ঊর্ধ্বমুখী হবে। এ কারণে লো প্রেসারের রোগীদের সব সময় কাজে-কর্মে
বা হাঁটা চলার মধ্যে থাকা উচত
প্রেসার লো হলে কি হয়
প্রেসার লো যেহেতু যে কোন বয়সের মানুষের এবং যেকোনো ধরনের স্বার্থের
মানুষের হতে পারে এই কারণে সকলের জেনে রাখা উচিত প্রেসার লো হলে কি হয়। বা
প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হতে পারে। কারণ যখন আপনি প্রেসার লো হলে কি কি
অসুবিধা হতে পারে জানবেন তখন আপনি এসব বিষয়ে সচেতন হতে পারবেন। দেরি না করে চলুন
তাহলে জেনে নেওয়া যাক প্রেসার লো হলে কি হয়। নিচে প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা
হয় সে বিষয়গুলোর তালিকা আকারে তুলেধরা হলো,
- মাথা ঘুরা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া
- শারীরিক দুর্বলতা
- চোখে অন্ধকার দেখা
- মানসিক অবসাদ
- পিপাসা লাগা
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- বিভিন্ন কাজে অমনোযোগী হওয়া
প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে অথবা প্রেসার লো হলে কোন
কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত। লো প্রেসার অত্যন্ত জটিল কোন সমস্যা নয়, লো প্রেসার
সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে আপনি প্রয়োজন মতন বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনার
প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। ঔষধ খাওয়ার পরিবর্তে আপনি যদি খাদ্য
খাওয়ার ব্যাপারে একটু সচেতন হন তাহলে লো ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের রাখা আপনার
জন্য খুব একটা অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। আর দেরি না করে বা কথা না
বাড়িয়ে চলুন তাহলে জেনে নিন প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে সেই খাবারগুলো
সম্পর্কে।
ভিটামিন বি১২ঃ শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়ার মূল কারণ হলো ভিটামিন বি
১২ এর ঘাটতি আর শরীরের রক্তস্বল্পতার কারণে সৃষ্টি হতে পারে লো প্রেসার। এই কারণে
প্রেসার লো হলে আপনাকে ভিটামিন বি ১২ জাতীয় খাবার গুলো বেশি খেতে হবে। ভিটামিন
বি ১২ সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে বেশি খেতে পারেন,
- বাদাম
- কিসমিস
- মধু
লবণঃ যে সকল জাতীয় খাবার গুলোতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে লো প্রেসারের
রোগীদের জন্য সে সকল খাবারগুলো খাওয়া উপকারী। লবণ জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে,
- বিভিন্ন ধরনের আচার
- কটেজ চিজ
- আইস স্যালাইন
- সী ফিস
লিকুইড খাবারঃ যাদের প্রেসার লো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের লিকুইড
জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়া উচিত এতে শরীরে রক্ত চলাচলের মাত্রা ঠিক
থাকবে। লিকুইডজাতীয় খাবারের মধ্যে রাখতে পারেন,
- ফলের জুস
- কফি
- চা
- স্যুপ
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবারঃ শরীরে রক্তের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং লো
প্রেসার এর সমস্যা দূর করতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি
খেতে হবে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার গুলো শরীরে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য
করে এবং হল ব্লাড প্রেসার এর সমস্যা থেকে দূরে রাখে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রাখতে পারেন।
- আলু
- আল
- টক জাতীয় ফল
- বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি
- সিদ্ধ ডিম
প্রেসার লো হওয়ার কারণ
প্রেসার লো হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে। আপনার যখন জানা থাকবে কোন কোন কারণ
গুলোর জন্য প্রেসার লো হয়ে থাকে তখন আপনি এই সকল বিষয়গুলো র প্রতি
যত্নবান হতে পারবেন এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে তার বিপরীতে সতর্কতামূলক
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। বেশ কয়েকটি কারণ নেই প্রেসার লো হওয়ার
সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রেসার লো হওয়ার কারণগুলো হলো,
- পানি শূন্যতা
- খাদ্য ঘাটতি
- বেশি পরিশ্রম
- খাদ্য ঠিক মতন হজম না হওয়া
- অপুষ্টি
- রক্ত শূন্যতা
- ঘুমের ঘাটতি
- হরমোনের তারতম্য
লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়
লো প্রেসারের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। লো প্রেসার এর
কারণে কি কি সমস্যা বা জটিলতা হয়ে থাকে আগে জেনে ফেলেছি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়টি হচ্ছে যে প্রেসার লো হলে ক্ষতি কতটা মারাত্মক হতে পারে? লো প্রেসারের
কারণেও জীবন নাশের নতুন ঘটনা ঘটতে পারে তবে এটি খুব কম দেখা যায়। লো ব্লাড
প্রেসার এর ক্ষতির তীব্রতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে থাকেন বা এই ব্যাপারটি
অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। অনেকেই জানেন না লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়, নাকি হয়
না। বিষয়টি জানলেও দোটানাই থাকেন বা নিশ্চিত হয়ে এ বিষয়টি বলতে পারেন না। তাই
আজকে আপনাদের ক্লিয়ার ভাবে জানিয়ে দেবে লো প্রেসার হলে স্ট্রোক হয় কিনা সে
সম্পর্কে। লো প্রেসার এর কারনেও অনেক সময় স্ট্রোক হয়ে থাকে এবং শরীর অনেকটা
ভারী ভারী লাগে।
গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে করণীয়
অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের প্রেসার লো হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। গর্ভবতী
মায়েদের যদি প্রেসার লো হওয়ার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে শুরু থেকে এর ব্যাপারে
সাবধান হতে হবে কারণ, গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো থাকলে এটি বাচ্চার উপরে প্রভাব
ফেলতে পারে বা অনেক সময় দুর্বল শিশু প্রসব এবং মৃত শিশু প্রসব করতেও দেখা
যায়। এ কারণে গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে অবশ্যই এর ব্যাপারে অবহেলা না করে
ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে
করণীয় হিসেবে খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার যুক্ত করতে পারেন এবং একই স্থানে
শুয়ে বসে না থেকে গর্ভকালীন ব্যায়ামগুলো নিয়মিত ভাবে করতে পারেন। গর্ভ
অবস্থায় প্রেসার লো হলে সেই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আপনি যে খাবারগুলো
গ্রহণ করবেন সেগুলো সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলো।
তুলসী পাতাঃ গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে আপনি তুলসী পাতার রস খেতে পারেন
কারণ তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম ভিটামিন
সি জাতীয় উপাদান আর এ উপাদান গুলো গর্ভাবস্থায় প্রেসার এর লেভেল ঠিক রাখতে
সাহায্য করবে। তুলসী পাতা খাওয়ার জন্য আপনি কয়েকটি পাতা দিয়ে খেতে পারেন অথবা
তুলসী পাতা থেকে রস বের করে এর সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
চুল পড়া কমানোর উপায়
লবণ অথবা লবণ সমৃদ্ধ খাবারঃ যেসব খাবারের লবণ বেশি থাকে সেই ধরনের খাবার
গুলো গর্ভ অবস্থায় প্রেসার লো এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এ ধরনের
খাবার গুলোর মধ্যে আচার জাতীয় খাবার, সামুদ্রিক মাছ বেশি খান। অথবা মাঝে মাঝে
খাবার স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন।
মৌরিঃ রক্তচাপ বাড়াতে মৌরি বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে। আর এই কারণে
গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো থাকলে সেটি বাড়াতে মৌরি, গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
মৌরিতে রয়েছে পটাশিয়াম , ক্যালসিয়াম , আয়রন ,ম্যাঙ্গানিজ, জিংক এজন্য বিভিন্ন
খাবার প্রস্তুত এর সময় মসলার সাথে মৌরি অ্যাড করলে এটি গর্ভাবস্থায় আপনার
প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে অনেকটাই কাজে দেবে।
গাজরের রসঃ প্রতিদিন যদি এক গ্লাস অথবা হাফ গ্লাস গাজরের রস মধুর সাথে
মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে একটি গন্ধ অবস্থায় লো প্রেসারের সমস্যা দূর করবে, কারণ
গাজর পেশার এর চাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
লেবু পানিঃ আমরা আগেও জেনেছি প্রেসার লো হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি কারণ
হলো পানি শুন্যতা। যেহেতু পানি শূন্যতা থেকে লো প্রেসার এর সৃষ্টি হতে পারে আর
শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত জরুরী, তাই আপনি যদি মাঝে মাঝে
লেবু পানি পান করেন তাহলে এটি আপনাকে সারের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করেবে এবং
পানি শূন্যতা দূর করব।
আদাঃ গর্ভাবস্থায় প্রেসার থাকলে মসলা জাতীয় খাবারের মধ্যে আদার পরিমাণ
একটু বেশি রাখুন কারণ আদা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন
যাদের প্রেশার হাই আছে তারা আদা খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতো।
কিসমিসঃ গর্ভাবস্থায় প্রেসার লো হলে খালি কিসমিস অথবা ভেজানো কিসমিস খেতে
পারেন। নিয়মিত ১-২ সপ্তাহ এভাবে খালি পেটে সকাল বেলা কিসমিস খেলে,
গর্ভাবস্থায় প্রেসার এর মাত্রা ঠিক থাকবে।
মন্তব্য, আশা করছি পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে লো প্রেসার
সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিয়েছেন। আমাদের মধ্যে
অনেকেরই এমন মনোভাব থাকে যে প্রেসার লো হলে সাময়িকভাবে একটা ডিম সিদ্ধ,
একটু খাবার স্যালাইন খেলেই প্রেসার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, কিন্তু
খালি ডিম ও খাবার স্যালাইন খেয়েই লো প্রেসার এর বিষয়টি এড়িয়ে গেলে চলবে না।
মনে রাখতে হবে হাই প্রেসার এর মতন লো প্রেসারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
প্রেসার লো থেকে অনেক সময় মৃত্যুর মতন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই অবশ্যই লো
প্রেসার কে অবহেলা না করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং সচেতন
হন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url