দাঁত শিরশির করার কারণ - দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

প্রবাদে একটি কথা আছে - দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বোঝা। আসলেই আমাদের দাঁত যখন ভালো থাকে তখন এটি ব্যাপারে আমরা যত্নশীল হই না , আর অবহেলার কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে একটি হলো দাঁত শিরশির। আজকে আমরা জানবো দাঁত শিরশির করার কারণ এবং লাভ শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।


দাঁত শিরশির করার পেছনে রয়েছে দাঁতের সেনসিটিভিটি বেড়ে যাওয়া। আর দাঁতের সেনসিটিভিটি বেড়ে যাওয়ার পরেও আমরা যদি এটি নিয়ে অবহেলা করি বা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে এখান থেকে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে পরিণত হয়ে থাকে। তাই শুধু থেকেই দাঁতের সেনসিটিভিটি বা শিরশির অনুভূতি নিয়ে সচেতন হন। আপনি যদি না জেনে থাকেন দাঁত শিরশির করার কারণ ও দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে খুব ভালোভাবে এই বিষয়টি জেনে নিতে পারেন। কারণ এই পোস্টের মাধ্যমে এখন আলোচনা করা হবে দাঁত শিরশির করার কারণ এবং দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়।

আলোচনায় যা যা জানবেনঃ দাঁত শিরশির করার কারণ - দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

দাঁত শিরশির করার কারণ

দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে দাঁত শির শির করার সমস্যাটি অন্যতম। দাঁত শিরশির করার পেছনে থাকতে পারে একাধিক কারণে। আজকে আমরা জানবো দাঁত শিরশির করার কারণ গুলো। আপনার যদি দাঁত শিরশির করার কারণগুলো জানা না থাকে তাহলে এখনই এই সেনসিটিভ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিন । মূলত দাঁত যখন অত্যন্ত সমবেদনশীল হয়ে উঠে ঠিক তখনই দাঁত শিরশির করার মতন অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এবং দাঁত সংবেদনশীল হওয়ার পেছনে রয়েছে দাঁতের এনামেল নামক স্থানটি ক্ষয় হওয়া। দাঁত শিরশির করার কারণ এর এর জন্য আরও যেসব বিষয়গুলো দায়ী সেগুলো হল।

আমরা অনেকেই ভুল পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করি যার ফলে দাঁতের সেন্সেটিভিটি বেড়ে গিয়ে দাঁত শিরশির এর অনুভূতি সৃষ্টি হয়। অনেক সময় তাড়াহুড়ার কারণে আমরা দ্রুত এবং জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করি, যে কাজটি করা মোটেই উচিত না এভাবে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের মাড়ির ওপরে প্রচুর চাপ পড়ে যার ফলে দাঁতের গোড়া মজবুত থাকে না এবং বেড়ে যায় সেনসিটিভিটি। তাই বলে যদি আবার বেশি সময় ধরে একেবারে আস্তে আস্তে দাঁত ব্রাশ করতে থাকি তবে সেটিও দাঁতের জন্য খারাপ কারণ বেশি সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করার জন্য তৈরি হতে পারে সেনসিটিভিটি বা দাঁতের শিরশিরানি।

আরো পড়ুনঃ মুখের দূর্গন্ধ দূর করার উপায়

টুথব্রাশ বেশি শক্ত হলে , সেই টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা হলে দাঁতের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যার ফলে যে কোন কিছু বিশেষ করে ঠান্ডা অথবা গরম খাবার খাওয়ার সময় দাঁত শির শির এর অনুভূতি হয়।শক্ত জিনিস বেশিক্ষণ ধরেছি চিবানো খেলে দাঁতের গোড়া ক্ষয় হয়ে গিয়ে এটি দাঁতের ডেন্টিং বের করে দেয় যার ফলে সৃষ্টি হয় দাঁতের সেন্সেটিভিতে।কোল্ড্রিংস বা এসিড রয়েছে এই জাতীয় পানীয় বেশি পান করলে দাঁত অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে ঠান্ডা ও গরম খাবার খাওয়ার সময় অনুভূত হয় শিরশির। আশা করছি দাঁত শিরশির করার কারণ গুলো বুঝতে পেরেছেন।

দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

এতক্ষণ আমরা দাঁত শিরশির করার কারণ গুলো জেনেছি এবার আমাদেরকে জানতে হবে দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। শুরু থেকেই যদি আপনি দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করেন তাহলে খুব দ্রুত এটি পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। আর যদি আপনি  এই  সমস্যাটি কে অবহেলা করে কোন পদ্ধতি অবলম্বন না করেন তাহলে দিনে দিনে দাঁতের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ার মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়। বিভিন্ন ভাবে দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় গুলো আপনি অনুসরণ করতে পারেন। আপনার জন্য এর দিকনির্দেশনা গুলো নিচে দেয়া হল

মধু দিয়ে কুল্কুচি করাঃদাঁত শিরশিরের অনুভূতি কমানোর জন্য উষ্ণ গরম পানির মধ্যে মধু লুকিয়ে কুলকুচি করতে পারেন এতে খুব দ্রুত আপনার দাঁতের শিরশির ভাব দূর হবে।

গ্রিন টিঃ আপনি যদি দাঁতের শিরশির অনুভূতি বন্ধ করার জন্য ঘরোয়া মাউথওয়াশ চান তাহলে এর জন্য গ্রিনটি মাউঠ হিসেবে ব্যবহার করলে অত্যন্ত ভালো ফল পাবেন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন খুব গরম অবস্থায় গ্রিন টি দিয়ে কুলকুচি করবেন না , গ্রিন টি বানানোর পরে হালকা গরম অবস্থায় মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করুন।

লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করাঃ দাঁতের শিরশির দূর করার জন্য অথবা দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করতে পারেন এতে দাঁতের শিরশির অনুভূতি দূর হওয়ার পাশাপাশি আর মুখে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটলে সেটি সারাতে সাহায্য করবে।

দাঁতে হলুদ গুঁড়া ব্যবহার করুনঃ হলুদের ভেতরে কারফিউমের নামক উপাদান জীবাণু দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং এটি দাঁতের শিরশিরানি দূর করতেও অত্যন্ত কার্যকর। হলুদ গুড়ার সাথে সরিষার তেল মিক্স করে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এটি দাঁতে মাখিয়ে। কিছুক্ষণ নিয়মিত কিছুদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে আপনার দাঁতের শিরশির দূর হবে।

এছাড়াও দাঁতের শীর্ষে আমি দূর করার জন্য , দাঁতের সেনসিটিভ অবস্থায় বেশিক্ষণ ধরে অথবা জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকুন এবং সপ্তব্রাস ব্যবহার না করে নরম ব্রাশগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

দাঁত শিরশির বন্ধ করার ঔষধ

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা দাঁত শির শির এর কারণ এবং এর ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের দাঁতের সেনসিটিবিটির পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করার মতন এত সময় থাকে না অথবা এই পদ্ধতি গুলো ধীরে কাজ করে বিধায় একটু সময় প্রয়োজন হয় তাই জরুরী পরিস্থিতিতে দাঁত শিরশির বন্ধ করার ওষুধ গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। চলুন এবার আপনাদেরকে দাঁত শিরশির বন্ধ করার ওষুধ গুলোর নাম সম্পর্কে জানিয়ে রাখি।দাঁত শির শির এর তীব্রতা এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেশ কিছু হোমিও ওষুধ খুব দ্রুত কাজ করে দাঁত শিরশির বন্ধ করার ক্ষেত্রে। চলুন এবার সেই ওষুধগুলোর নাম জেনে নেওয়া যাক,

  • মার্ক সল
  • ক্যামমিলা
  • আর্নিকা
  • হেপার সালফ
  • সিলিসিয়া
  • আর্সেনিক
  • ব্রায়োনিয়া
  • মারকুরিয়াস
  • পালসেটিল্লা

এগুলো ছাড়াও যে সকল বায়োকেমিক ওষুধগুলো দাঁতের শির শির অনুভূতি দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে সেগুলো হলো।

  • ক্যালকেরিয়া ফসফরিকা
  • ক্যালকেরিয়া ক্লোরিকা
  • সাইলেসিয়া

দাঁত শিরশির বন্ধ করার পেস্ট

বাজারে বিভিন্ন ধরনের দাঁত শিরশির বন্ধ করার পেস্ট গুলো আপনি অনায়াসে পেয়ে যাবেন । আপনার দাঁতের যখন সেন্সেরটিভিটি বেড়ে যাবে তখন নরমাল পেস্ট ইউজ করা বন্ধ করে দিয়ে , দাঁত শিরশির বন্ধ করার পেস্ট গুলো ব্যবহার করুন। আপনার দাঁতে সেনসিটিভিটি দূর করতে এই পেস্ট গুলো অনেক কার্যকরী হবে। আপনাদের সুবিধার কারণে বেশ কয়েকটি ভালো মানের দাঁত শিরশির বন্ধ করার পেস্ট এর নাম তুলে ধরা হল , আশা করছি নিচে দেওয়া এই পেজগুলো আপনার দাঁতের সেন্সিটিভিটি দূর করার জন্য বিশেষ সাহায্য করবে । দাঁতের শিরশির বন্ধ করার পেস্ট গুলোর নাম।

  • Arm and Hammed Advance White 
  • Oral B Pro Expert 
  • Medipluse DS tooth paste 
  • Pepsodent Toothpaste 
  • Blan X Classic 
  • Colgate Total Advanced Whitening
  • Sensodyne toothpaste

দাঁত টক হওয়ার কারন ও প্রতিকার

টক জাতীয় জিনিস খাওয়ার পরে অন্য খাবার খাওয়ার সময় দাঁতের টক ভাব অনুভূত হওয়ার ঘটনাটি আমাদের প্রায় সকলের সাথেই ঘটে থাকে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন দাঁত টক হওয়ার কারণ কি। আজকে আপনাদের জানাবো দাঁত টক হওয়ার কারণ সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দাঁত টক হওয়ার পেছনের কারণগুলো।

দাঁত টক হওয়ার কারণঃ সাধারণভাবে বলতে গেলে দাঁত টক হওয়ার পেছনে টক জাতীয় ফলের মধ্যে থাকা এসিড গুলো দ্বায়ী। বিভিন্ন ধরনের ত্বক জাতীয় ফলের মধ্যে  PH মাত্রর এসিড থাকে। ফলের মধ্যে থাকা PH এসিডের মান যদি 5.5 এর নিচে নেমে যায় তখন দাঁতের এসিডিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় আর এই পরিবেশকে জন্মাতে পারে ব্যাকটেরিয়া. যেই ব্যাকটেরিয়া গুলো নাকি যে শর্করা জাতীয় খাবার গুলোকে গাজন প্রক্রিয়ায় তৈরি করতে পারে ল্যাটিক এসিড। ল্যাটিক অ্যাসিড থেকে দাঁতের ক্ষতি হতে থাকলে তখন দাঁতের ভেতরে থাকা খনিজের ভাঙ্গন শুরু হয় এবং দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে। যার ফলে দাত টক হওয়ার সমস্যার পাশাপাশি দাঁত শির শির অনুভূতিও সৃষ্টি হয়।

আরোও পড়ুনঃ মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

দাঁত টক হওয়ার প্রতিকারঃ দাঁতের এই টক ভাব এর প্রতিকার হিসেবে আপনি হলুদ এবং সরিষার তেল একসাথে মিক্স করে পেস্ট এর মতন দাঁতের উপরে ব্যবহার করতে পারেন। দাঁত চক হলে মধুর সাথে পানি মিশিয়ে কুল্কুচি অথবা হালকা গরম পানির মধ্যে লবণ দিয়ে দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার কুলি করুন। এ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে দেখবেন খুব দ্রুত আপনার দাঁতের টক ভাব দূর হয়ে গেছে।

মন্তব্য , এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই দাঁত শির শির করার কারণ এবং দাঁত শিরশির থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়েছে। যদি এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করার পরেও আপনার দাঁতের  শির শির অনুভূতির কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে অবশ্যই এটি নিয়ে অবহেলা না করে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং আপনার দাঁতের সঠিক চিকিৎসা করান। আশা করছি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url