ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস

একটি দেশের পুরাকীর্তি সেই দেশের অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। দেশটি কত উন্নত ছিল, তার সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ ছিল, সে সম্পর্কে সে দেশের পুরাকীর্তি যে সাক্ষ্য তুলে ধরে তার ওপর ভিত্তি করে সে দেশের সভ্যতার মান নির্ণীত হয়। এমনি পুরাকীর্তির পরিচয় বহন করে আমাদের দেশের 'পাহাড়পুর' ও বগুড়া জেলার 'মহাস্থানগড়', যা আজ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত। তাই আজকে আমরা ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।

আমরা আজকে জানবো ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস সম্পর্কে, কেননা বাংলাদেশে বসবাস করা সত্ত্বেও অনেকেই জানা নেই এখানকার ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস সম্পর্কে।তাই চলুন এই পোস্টের মাধ্যামে জেনে নেয়া যাক ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস।এই পোস্টে ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস জানার পাশাপাশি আপনারা আরো জানতে পারবেন পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্থিত , মহাস্থনগড় কোন জেলায় অবস্থিত ,পাহাড়পুরের নির্মাণশৈলী, মহাস্থানগড় এর চমকপ্রদ ঘটনা , মহাস্থানগড় এর দর্শনীয় বস্তু বিষয় গলো সম্পর্কেও।
সূচিপত্রঃ ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস

পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্থিত

ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহার জানার আগে চলুন আলোচনা করা যাক পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্থিত। আপনাদের সকলের কি জানা আছে পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্থিত ? যদি না জানা থাকে তাহলে জেনে নিন পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্থিত। পাহাড়পুর নামক ঐতিহাসিক স্থানটি রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। এই জেলাটি উত্তর-পশ্চিম রাজশাহীর একটি প্রাশাসনীক এলাকা।

পাহাড়পুরের ইতিহাস

অনেক মানুষ জানেনে পাহাড়পুর কেন বিখ্যাত,তাই আজকে আপনাদের জানাবো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুরের ইতিহাস সম্পর্কে। নওগাঁ জেলায় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। এটি নওগার অন্তর্ভুক্ত হলেও জয়পুরহাট জেলার অত্যন্ত কাছাকাছি। পাল বংশের বিখ্যাত রাজার ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীতে বিহারটি নির্মাণ করেন। বিহারটির কাঠামো প্রায় বর্গাকৃতি। এটি উত্তর দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট প্রশস্ত । 
দুর্গের মত উঁচু প্রাচীর ঘেরা সুরক্ষিত এই বিহারের শিষ্যদের থাকার জন্য ব্যবহৃত ১৭৭টি কক্ষের আসন্ধান পাওয়া গেছে। বিহারটির অভ্যন্তরে বর্গাকৃতি চত্বরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে ক্রুশাকৃতি ভিত্তির ওপর ধাপে ধাপে উঁচু হয়ে ওঠা প্রধান মন্দিরটি উত্তর দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৩৫৬ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং প্রস্থের পূর্ব-পশ্চিম ৩১৪ ফুট ৩ ইঞ্চি বিশিষ্ট। কেন্দ্রীয় মন্দিরের মূল অংশটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও ভুমি থেকে এর বর্তমান উচ্চতা ৭২ ফুট। কাজেই কেন্দ্রীয় মন্দিরের যখন অক্ষত ছিল তখন তার যথার্থই গগনস্পর্শী ছিল।

পাহাড়পুরের নির্মাণশৈলী

১৮০৭ শালির আগেও এ বিহারটি খবর কেউ জানতো না। এ মন্দিরের দেয়ালে অলংকৃত ইট দেখে সেকালের মানুষের রুচিবোধের তারিফ করতে হয় । তখনকার ঢেউখেলানো এবং খাচঁকাটা কার্নিশ দেখে অবাক হতে হয়। তাছাড়া বিশ্বের চোখ স্থির হয়ে যায়- কি করে সিমেন্ট ছাড়া এই ফলকগুলো হাজার হাজার বছর বেশি সময় ধরে দেওয়ালের গায়ে আটকে আছে। পাহাড়পুরের মন্দির, বৌদ্ধ আশ্রম, সন্নিকটে সত্যপীরের ভিটা, তাম্রলিপি, ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি এসব পুরাকৃতির নিদর্শন বিশ্বে বাঙালির গৌরবময় স্থান তৈরি করেছে।

মহাস্থানগড় কোন জেলায় অবস্থিত

এর আগে আপনাদের জানিয়েছি পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্থিত ,এবার আপনাদের জানাবো মহাস্থানগড় কোন জেলায় অবস্থিত।অনেকেই হয়ত জানেন না মহাস্থানগড় কোন জেলায় অবস্থিত,তাই চলুন এবার এ বিষয়টি জেনে নেয়া যাক। মাহাস্থানগড় অবস্থিত বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

মহাস্থানগড় এর ইতিহাস

প্রাচীনকালে কোনো এক রাজা ছিলেন। তার কোন রাজ্য ছিল না। তখনকার দিনে বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ়, গৌড় নামে একটি খন্ড রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এগুলোই হলো প্রাচীন বাংলার জনপদ। একসময় পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর সুলতানগঞ্জ এলাকায় ছিল প্রাচীন নগর বগুড়া মহাস্থানগড়ে পুণ্ড্রনগর। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। এটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ হলেও একটি মূল্যবান পুরাকীর্তি এবং দর্শনীয় স্থান। মহাস্থানগড়ের ইতহাস: মহাস্থান ইতিহাস অতি চমৎকার এবং উপভোগ্য বটে। অতীতে এখানকার এক প্রভাবশালী রাজা ছিলেন পরশুরাম। তার সময় বলক দেশ থেকে হযরত সুলতান বলখী ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য উত্তর বাংলায় আসেন। তিনি পাবনা জেলায় কিছুদিন অবস্থান করার পর কিছু সংখ্যক মুসলমান সাগরেদ নিয়ে বগুড়ায় আসেন এবং সুলতানগঞ্জ এলাকার একটি আস্তানা স্থাপন করেন। এ আস্থানাটি বগুড়া শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহাস্থানগড় নামে ইতিহাসখ্যাত। সবাই এখন তার আস্তানাটি মহাস্থানগড় নামেই জানেন।

মহাস্থানগড় এর চমকপ্রদ ঘটনা

একবার পরশুরামের সাথে সুলতান বলখীর ভিষণ যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধের পরশুরাম পরাজিত ও নিহিত হন। তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী শিলাদেবী কোনো উপায় না পেয়ে করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মবিসর্জন দেন । আজও সেখানে শিলাদেবীর বিসর্জন দেওয়া ঘাটটি "শিলাদেবীর ঘাট" নামে পরিচিত। এখন এই মহাস্থানগড়ে সারা বছর বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শকের আগমন ঘটে।

মহাস্থানগড় এর দর্শনীয় বস্তু

সুলতান বলখীর মাজারটি মহাস্থানগড়ের একমাত্র দর্শনীয় এবং সম্মানীয় স্থান। এ মাজারটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০/২৫ ফুট উঁচু জায়গায় অবস্থিত। মাজারের নিচে রয়েছে প্রধান খাদিম হায়াত নূরের কবর। এর একটু ডানদিকে দরবেশ বোরহান উদ্দিনের কবর। তারপর পাথরে বাধানো মোট ৩৮ধাপসহ একটি সিঁড়ি রয়েছে। মহাস্থানগড় অনেক পুরনো স্মৃতি বিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাড়ি। কালিদহ সাগর, বাসোবোনিয়া সওদাগরের ভি, গোবিন্দের ভিটা, উজানী ভাইটানি নগর। পরশুরামের ভাঙ্গা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাথর ঘাট ইত্যাদি। 
অনেক নিদর্শন নিয়ে এখন বিদ্যমান রয়েছে। এখানে জয়ৎকুপ নামে একটি অলৌকিক কুপের কথা শোনা যায়। এছাড়া ভাঙ্গা দুর্গের ভিতরে অনেক খন্ড খন্ড পাথর পড়ে আছে । এর একেকটি পাথর ১১ ফুট লম্বা ও ৩ ফুট চওড়া। এখানকার বিভিন্ন জায়গা জুড়ে বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, বৌদ্ধ ও মৌর্য যুগের একখানি শিলালিপি পাওয়া গেছে। এই শিলালিপিগুলোর কিছু ঢাকা রাজশাহী ও মহাস্থানগড় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মন্তব্য, পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এই জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানগুলা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং জাতীয় সম্পদ।আপনারা নিশ্চয় ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস সম্পর্কে জেনে উপকৃত হয়েছেন। এ মহামূল্যবান সম্পদটি আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য সরকারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা একান্ত আবশ্যক।এই ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর এবং মহাস্থানগড় এর ইতিহাস সম্পর্কে জানার পর আপনার দায়ীত্ব হবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান দুটি সম্পর্কে অন্যকে জানতে সাহায্য করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url