গ্রিন টি তৈরির নিয়ম - গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি পানীয়। গ্রিন টি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে বিশেষ করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। তাই এই পোস্টে আমরা গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা এবং ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো। এই বিষয়ে দুটি ছাড়াও এই প্রশ্নের মাধ্যমে আরো জানতে পারবেন গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক নিয়ম , গ্রিন টি তৈরি করার নিয়ম এবং গ্রিন টি বেশি খেলে কি হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।

গ্রিন টি অনেকেই উপকারী পানীয় হিসেবে পান করে থাকেন তবে এর গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জ্ঞান খুব কম মানুষেরই রয়েছে। আর সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই গ্রিন টি পানের সুফল থেকে বঞ্চিত হন। তাই গ্রিন টি পানের পূর্বে অবশ্যই জানতে হবে এর সঠিক নিয়ম। আর এই কারণে আজকের পোস্টের মধ্যে আমরা আলোচনা করব গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা , ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম , গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় , গ্রিন টি বেশি খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত। আর গ্রিন টি বিষয়ক এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে হলে অবশ্যই আপনার এই পোস্টটি আপনাকে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম - গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

গ্রিন টি নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত হলেও এর গুণাগুণ এর সাথে এখনো হয়তো সবাই ভালোভাবে পরিচিত নই। আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি পানীয় হল গ্রিন টি।স্বাদের দিক থেকে কম হয় এটি আমরা অনেকেই পছন্দ করি না কিন্তু সাধের দিক থেকে কম হলেও স্বাস্থ্য উপকারের দিক থেকে পিছিয়ে নেই গ্রিন টি। আজকে আপনাদেরকে জানাবো গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। অনেকেই হয়তো গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তাই আজকে এই প্রশ্নের মাধ্যমে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নিন এবং এর মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখুন। যেসব ক্ষেত্রে গ্রিন টির উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো হল।

আরো পড়ুনঃ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ওজন কমাতেঃ শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে গ্রিন টি। এই কারণে যারা স্থূলতা অথবা শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা নিয়মিত পান করুন গ্রিন টি এতে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন খুব সহজে ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন। 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ গ্রিন টি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে যার ফলে হার্টের বিভিন্ন অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করেন তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০% কম থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরে ক্যান্সারের সেলগুলো ড্যামেজ করতে এই পানীয়টি বিশেষভাবে সাহায্য করে। আর এই কারণে গ্রিন টি পান করলে অনেকাংশে ক্যান্সারের বুকে মুক্ত থাকা যায় বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের।

মানসিক অবসাদ কমায়ঃ গ্রিন টি পানের ফলে মানসিক অবসাদ কম হয় কারণ গ্রিন টি এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন রয়েছে যা আমাদের ডিপ্রেশন কমাতে বিশেষ সাহায্যকারী।

রূপচর্চায়ঃ স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি রূপচর্চার কাজেও বিশেষ উপকারী গ্রিন টি। ব্রণ দূর করতে , ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে , ত্বক উজ্জ্বল, ডাক সার্কেল দূর করতে চুলের গোড়া মজবুত করতে ও চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা হয় গ্রিন টি।

দাঁত ভালো রাখেঃ গ্রিন টির ভেতরে থাকা বিশেষ উপাদান গুলো দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। গ্রিন টির ভেতরে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় দাঁত , দাঁতের গোড়া অথবা মুখের ভেতরে যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ধ্বংস করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে গ্রিন টি।

এছাড়াও নিয়মিত গ্রিন টি পানের ফলে এলার্জির সমস্যা দূর হয়, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ,  স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে গ্রিন টি। গ্রিন টির ভেতরে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদানটি শরীর সতেজ ও শক্তিশালী রাখতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।

গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময়

গ্রিন টি খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদেরকে জানতে হবে গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে। আমরা যদি গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় না জেনে যখন তখন গ্রিন টি পান করি তাহলে এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা উপকারিতা বয়ে আনবে না বরঞ্চ কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ বা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করেন তারা অবশ্যই দিনটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে প্রথমে জেনে নিন।

আমাদের মধ্যে অনেকেই দেখা যায় যে সকালবেলা উঠে খালি পেটে অথবা দিনের যেকোনো সময় পেট যখন খালি থাকে তখন গ্রিন টি পান করে আবার অনেকে দেখা যায় খাবার খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করে থাকে। কিন্তু এটি গ্রিন টি পানের সঠিক নিয়ম নয় গ্রিন টি খালি পেটে পান করলে অথবা একদম ভরা পেটে খেলে উপকারের চাইতে অপকারিতা পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই গ্রিন টিপান করতে হবে ভারী খাবার খাওয়ার অন্ততপক্ষে ২-৩ ঘন্টা পরে অথবা দুটি ভারী খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে। আমরা যদি ভারী খাবার খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করি তাহলে এটি আমাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে একদম খালি পেটে কখনোই গ্রিন টি পান করা যাবে না। কারণ গ্রিন টির ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী অক্সিজেন পনিফেলন। এই উপাদান দুটি খালি পেটে গ্রিন টি পান করার ফলে ইমিউন সিস্টেম কে বাধাগ্রস্ত করতে পারে যার ফলে হজমের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। আর এ কারণে সকালবেলা গ্রিন টি পান করতে হলে অবশ্যই নাস্তা করার ১/২ ঘন্টা পরে পান করতে হবে এছাড়াও গ্রিন টি পান করতে পারেন শরীর চর্চা করার কিছুক্ষণ আগে এতে আপনার শরীরের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আরো সহজ ভাবে যদি বলতে হয় তাহলে গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় হল,

  • খাবার বা নাস্তা খাওয়ার একঘন্টা পরে
  • শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করার পূর্বে
  • রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ১-২ ঘন্টা আগে

গ্রিন টি তৈরির নিয়ম

এবার আমরা গ্রিন টি তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে জানবে। গ্রিন টির মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে হলে আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে গ্রিন টি তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে। কারণ আমরা যদি সঠিক নিয়মে গ্রীন তৈরি করতে না পারি তাহলে কখনোই পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবো না। তাই চলুন আজকে গ্রিন টি তৈরির নিয়ম জেনে নেয়া যায়। দেশের বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টি ব্যাগ আকারে গ্রিন টি পাওয়া যায়। তবে এই গ্রীন টিটগুলোর চাইতে প্যাকেট বা ওজন করে কিনা গ্রিনটিগুলো বেশি স্বাস্থ্যকর।টি ব্যাগ গ্রিন টি বানানোর নিয়ম সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি, একটি চায়ের পাতিলে পানি গরম করে সেই গরম পানি কাপে ঢেলে নিতে হয় এবং এই কাপের মধ্যে গ্রিন টির টি ব্যাগ কিছুক্ষণ ভেজালে পানি যখন সবুজ আকার ধারণ করে তখন উঠিয়ে নিতে হয়।

আরো পড়ুনঃ পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা

টি ব্যাগ ছাড়া যদি আপনি প্যাকেট বা ওজন করে কেনা গ্রিন টি তৈরি করতে চান তাহলে প্রথমে একটি পাত্রে পানি গরম করে নিতে হবে তারপর সেই পানি একটি কাঁচের পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। গরম পানি কাঁচের পাত্রে নেয়ার পরে পরিমাণ মতো গ্রিন টি সেই পাত্রে দিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে এই অবস্থাতে খেয়াল রাখতে হবে গ্রিন টি তৈরীর জন্য যে গরম পানি নেওয়া হয়েছে সেটির তাপমাত্রা যদি ৮০° সেলসিয়াস হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। কাঁচের পাত্রে ভিজিয়ে রাখা গ্রিন টি দুই থেকে তিন মিনিট পর ছেকে নিয়ে এবার আপনি খেতে পারবেন।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন গ্রিন টি তৈরি করার সময় কখনই এর সাথে চা পাতা অথবা দুধ মেশানো যাবে না। এগুলোর পরিবর্তে আপনি চাইলে দারুচিনি , এলাচ , চ আদা , লেবুর রস মিশাতে পারেন। আশা করি গ্রিন টি তৈরির নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

মন্তব্য , উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে শরীরের জন্য উপকারী পানীয় বলেই , যখন তখন বেশি বেশি গ্রিন টি পান করা যাবে না। গ্রিন টি পান করতে হবে সময় মেনে সঠিক নিয়ম। তাই সুস্থ থাকতে সঠিক নিয়মে সঠিক সময় গ্রিন টি পান করার চেষ্টা করুন এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url