আনারসের ১২টি উপকারিতা - আনারস খাওয়ার নিয়ম

আমাদের স্বাস্থ্যের উপরে আনারসের উপকারিতা অনেক বেশি। তবে আনারসের এইসব স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে জানাতে হবে আনারস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য আজকে এ মাধ্যমে আনারসের ১২টি উপকারিতা কথা বলব। আনারসের ১২টি উপকারিতা জানার জন্য, চলুন দেরি না করে পুরো পোস্টটি পড়ে ফেলা যাক।

ভাইরাস জ্বরের আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি তবে খালি ভাইরাস জ্বরের ক্ষেত্রে নয় এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আনারসের রয়েছে অনেক ধরনের উপকারিতা। আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের মোটামুটি ধারণা থাকলেও , এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জ্ঞান আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষেরই কি রয়েছে। তাই আজকে আপনাদেরকে আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবো এবং এর পাশাপাশি আরো জানাবো আনারস খাওয়ার নিয়ম ও আনারসের অপকারিতা সম্পর্কেও।

আনারসের উপকারিতা

আনারস অত্যন্ত উপকারী একটি ফল, বিশেষ করে যেকোনো ভাইরাস জ্বর , ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি দূর করতে এর জুড়ি মেলা ভার। এবং এই ফলটি অনেকের পছন্দের ফলের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আমরা কয়েকজন জানি? তাই তাই আনারসের উপকারিতা জানতে চলুন আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। এখন আপনাদেরকে আনারসের ১২টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে  আনারসের ১২টি উপকারিতা জেনে নেয়া যায়।

পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেঃ আনারসের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে তাই এই ফলটি আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে. আনারস থেকে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস , পটাশিয়াম , ক্যালসিয়াম ,ভিটামিন এ , ভিটামিন সি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায় আর এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। তাই আনারস খেলে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদার একটি বড় অংশ খুব সহজে পূরণ করা সম্ভব হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আপনাদেরকে আগেই জানিয়েছি যে আনারসের মধ্যে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমাদের শরীরের এই জরুরী উপাদানগুলোর পুষ্টি ঘাটতি আনারসর এর মাধ্যমে পূরণ হয় বিধায় আমাদের শরীরে আনারস খেলে পুষ্টি ঘাটতি থাকা সম্ভাবনা কম থাকে। আর যখন আমাদের শরীরের সব ধরনের পুষ্টি সঠিক মাত্রায় থাকবে তখন আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে , অর্থাৎ আনারস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

ভাইরাসজনিত জ্বর দূর করেঃ আনারসের আরেকটি বড় উপকারিতা হলো এটি যেকোনো ধরনের ভাইরাস জ্বর দূর করতে বিশেষ সাহায্য করে , কারণ আনারসের ভেতর থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। শুধুমাত্র ভাইরাস জ্বর দূর করতেই নয় ,ভাইরাসজনিত যে কোন সমস্যা দূর করতে আনারস বিশেষ কার্যকরী।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ শুধু ভাইরাস জ্বরই নয় আনারস ক্যান্সার প্রতিরোধে হিসেবেও কাজ করে , আনারসে রয়েছে উচ্চমাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এই দুটো উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকাই আনারস খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার নামক রোগটি বাসা বাঁধতে পারে না এবং এর ফলে আমরা ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে পারি।

চোখ ভালো রাখেঃ ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন নামক রোগ যে রোগে নাকি চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এই রোগটি আমাদের থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে আনারস। আনারসের ভেতরে বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান থাকায় আনারস খেলে ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন নামক রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে।

আরো পড়ুনঃ হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা

হাড় গঠনে সহায়তা করেঃ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম , আর প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকাই এই ফলটি আমাদের শরীরের হাড় গঠনের সহায়তা করে। ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি আনারস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজও পাওয়া যায় যা আমাদের হারকে মজবুত করতে এবং হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

স্কিন ভালো রাখেঃ আপনারা জানেন যে , আনারসের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে আর এই দুটো উপাদান আমাদের স্কিন ভালো রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। আনারসের ভেতরে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয় এবং ত্বক গ্লোয়িং করতে সাহায্য করে পাশাপাশি তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা দূর করতে এবং ব্রণ দূর করতেও বিশেষ সাহায্য করে।

কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করেঃ কৃমি নাশক হিসেবেও আনারসের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। আনারস খেলে কৃমির সমস্যা ও সহজে দূর হয়ে যায়। কৃমি দূর করতে সকালে খালি পেটে আনারস খেতে পারেন এতে খুব তাড়াতাড়ি কৃমির সমস্যা সমাধান হবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অন্যান্য উপকারিতার পাশাপাশি আনারস আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে , কারণ আনারসের ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং এই আনারসের ভেতরে ফ্যাট নাই বললেই চলে তাই আনারসের জুস অথবা আনারস খেলে এটি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

হজমে সহায়তা করেঃ আনারস আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। আনারসের ভেতরে ব্রোমেলিন নামের এক ধরনের এনজাইম থাকায় এটি আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং হজম সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে।

দাঁত ও দাঁতের মাড়ি ভালো রাখেঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম থাকায় আনারস খেলে দাঁত ও দাঁতের মাড়ি ভালো থাকে। এছাড়াও আনারস খেলে দাঁতে এবং দাঁতের মাড়িতে হওয়া জীবাণুর সংক্রমণ হয় না।

অন্যান্যঃ আনারস এর আরাও যে সব ক্ষেত্রে উপকারীতা রয়েছে সেগুলো হল , আনারস জন্ডিস , সর্দি , গলা ব্যথা , রক্ত জমাট বাধা , ব্রংকাইটির ইত্যাদি রোগের ঔষধ হিসেবেও বিশেষ কার্যকরী।

আনারস খাওয়ার নিয়ম

আপনি কি আনারস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন ? আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আনারস খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জানেন না। তাই যারা আনারস খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জানেন না তাদের আজকে এই বিষয়টি জানাবেন। আপনি যদি আনারস খাওয়ার নিয়ম জানেন তাহলে এর থেকে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন তাই আনারস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আনারস খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন।

আমরা সাধারণত জানি যে ফল ভরা পেটে খেতে হয় কিন্তু এমন কিছু ফল রয়েছে যেগুলো খালি পেটেও খাওয়া যায় এবং খালি পেটে খেলে এই ফলগুলো বিশেষ উপকারিতা পাওয়া যায় আর এই জাতীয় ফল গুলোর মধ্যে আনারস একটি। তাই আনারস সকালে খালি পেটে খেতে পারেন , আনারস আমাদের শরীরের ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগ গুলোর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে আনারস খেলে এটি কৃমিনাশক হিসেবে যথেষ্ট সাহায্য করে , তবে যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে আনারস না খাওয়াই ভালো এতে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। আপনি আনারস খেতে পারেন শরীর চর্চার আগে এবং পরে কারণ শরীরচর্চার আগে অথবা পরে আনারস খেলে এটি আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়

অনেকের মধ্যেই গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়ার নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে , এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য এখন আপনাদের জানাবো আর ব্যবস্থায় আনারস খেলে কি হয় এই প্রশ্নের উত্তরটি। কেননা আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন গর্ভাবস্থা আনারস খেলে কি হয়। অনেক মানুষ মনে করেন গর্ব অবস্থায় আনারস খেলে আব্রসনের ঝুকি বেড়ে যায় আর এর পেছনের কারণ হিসেবে তারা তুলে ধরেন আনারসের ভেতরের ব্রমিলিন এর উপস্থিতিকে , কিন্তু অনেক মানুষই হয়তো জানে না যে আনারসের ভেতরে ব্রমিলিন থাকলেও এর পরিমাণ খুব কম এবং এই পরিমাণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য সম্পন্ন নিরাপদ। গর্ভবতী মায়েরা দিনে তিন থেকে চার টুকরা বা তার সামান্য বেশি আনারস নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। তবে এই বিষয়ে যদি আপনাদের পরেও কোন সন্দেহ থাকে তাহলে কোন একজন ভালো গাইনি ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে ব্যাপারটি সিওর হওয়াই ভালো।

আনারস খেলে কি গ্যাস হয়

আনারস খেলে কি গ্যাস হয় ? চলুন এবার এই বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক , আনারসের উপকারিতার ভেতরে বলা আছে আনারস আমাদের হজম প্রক্রিয়ার সাহায্য করে। তাই যাদের হজম শক্তি মোটামুটি ভালো তাদের ক্ষেত্রে ভরা পেটে আনারস খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে তবে যাদের হজম শক্তি কম তারা যদি সকালে খালি পেটে বা যেকোনো সময় খালি পেটে আনারস খায় তাহলে সেক্ষেত্রে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই থাকতে পারে। অর্থাৎ খালি পেটে আনারস খেলে গ্যাস হতে পারে ,আশা করি আনারস খেলে কি গ্যাস হয় বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

আনারস খাওয়ার অপকারিতা

স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আনারসের উপকারিতা থাকলেও এর পাশাপাশি আনারসের বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই আনারসের উপকারিতার পাশাপাশি এর অপকারিতা গুলো জেনে রাখা উচিত। এখন আপনাদের সাথে আনারসের কিছু ক্ষতিকর দিক বা আনারসের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আনারস একটি উপকারী ফল হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই আনারস খেলে এলার্জি সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যাদের আনারসে এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই শরীরে চুলকানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরো পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা

আনারসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নেচারাল সুগার ্থাকায় এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদেরকে অবশ্যই আনারস খাওয়ার পূর্বে এর পরিমাণ জেনে নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আনারস সপ্তাহে দুই দিনের বেশি খাওয়া উচিত নয়। যেসব রোগীদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে আনারস না খাওয়াই ভালো কারণ এতে এসিডিটি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

মন্তব্য , আপনার নিশ্চয়ই এতক্ষণে আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনেছেন কারণ আজকের এ পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানো হয়েছে আনারসের ১২টি উপকারিতা - আনারস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। দুই একটি ক্ষেত্রে আনারসের কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও তার তুলনায় আনারসের উপকারিতা অনেক বেশি। তাই আনারসের উপকারিতা এবং অপকারিতা চিন্তা করলে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায় , তাই আমাদের সকলেরই উচিত পরিমাণ বুঝে যতটা সম্ভব আনারস খাওয়ার চেষ্টা করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url