বাংলাদেশের সুন্দরবন - সুন্দরবনের অবস্থান ও আয়তন

সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ এবং পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রো বন এটি। অর্থনীতি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশের ওপরে সুন্দরবনের ভূমিকা অনেক বেশি তাই বাংলাদেশের এই জাতীয় সম্পদ অর্থাৎ বাংলাদেশের সুন্দরবন এবং সুন্দরবনের আয়তন অবস্থান সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাই আজকে আপনাদের কি বাংলাদেশের সুন্দরবন এবং সুন্দরবনের অবস্থান ও আয়তন সম্পর্কে জানাবো।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোবন হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবন সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখা আমাদের উচিত বাংলাদেশের সুন্দরবন এবং সুন্দরবনের আয়তন অবস্থান সম্পর্কে জানানোর পাশা পাশি বাংলাদেশের সুন্দরবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সঠিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করব। তাই এই বিষয়টির ওপরে যদি আপনি পর্যাপ্ত এবং বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে চান তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন। আর এ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পারবেন বাংলাদেশের সুন্দরবনের প্রভাব আমাদের অর্থনীতি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে কতটা অবদান রাখে আর সুন্দরবন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও। তাই আর দেরি না করে বাংলাদেশের সুন্দরবন সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখার জন্য আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বাংলাদেশের সুন্দরবন

সুন্দরবন আমাদের দেশের একটি সম্পদ কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষই এই সুন্দরবন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না বললেই চলে। এখনো যারা বাংলাদেশের সুন্দরবন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না তাদেরকে এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দেওয়ার জন্য আজকে আমরা  বাংলাদেশের সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।যারা সুন্দরবন সম্পর্কে জানেন না তাদের এই তথ্যগুলো বিশেষ কাজে আসবে বলে আশা করছি।সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর একক বৃহত্তম স্বয়ংক্রিয় উৎপাদনশীল ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। নানা ধরনের গাছপালার চমৎকার সমারোহ এবং বিচিত্র সব বন্যপ্রাণীর সমাবেশ সুন্দরবনকে চিহ্নিত করেছে এক অপরূপ প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে। 
সুন্দরবনের ৬২% বাংলাদেশের বৃহত্তর খুলনা জেলায় এবং অবশিষ্ট ৩৮% ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় অবস্থিত। সুন্দরবন হচ্ছে একক ইকোসিস্টেম। বিভিন্ন কারণে এটা মানুষের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু, লোভী মানুষের বেআইনিভাবে বৃক্ষ নিধন ও বন্যপ্রাণী শিকারের কারণে এই বন বর্তমানে ধ্বংসের মুখে। প্রাকৃতিক বন ব্যবস্থাপনা ছাড়া বাংলাদেশি বনবিদরা বিগত ৩ দশক ধরে বঙ্গোপসাগরের অভিমুখে ৭১০ কি.মি. উপকূলীয় এলাকার ব্যাপক হারে ম্যানগ্রোভ বন সৃষ্টিতে যুক্ত। ভয়ঙ্করভাবে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের চাপ এবং অন্যান্য বনের গাছপালার বিরামহীন সংকোচ বিবেচনা করলে ম্যানগ্রোভনের সার্বিক অবস্থা এখনো উৎসাহব্যঞ্জক।

সুন্দরবনের অবস্থান ও আয়তন

আমরা বাংলাদেশের অবস্থানরত হলেও অনেকেরই জানা নেই সুন্দরবনের অবস্থান ও আয়তন সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবনের অবস্থান ও আয়তন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আমাদের দায়িত্ব। যেহেতু এই বিষয়টি অনেকেই জানেন না তাই আজকে সুন্দরবনের সঠিক অবস্থান ও আয়তন সম্পর্কে আপনাদের একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। নিজে সুন্দরবনের আয়তন অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারবিধৌত গরান বনভুমি (Mangrov Forest)। কর্কটক্রান্তির সামান্য দক্ষিণে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০- ২২°৩০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০-৮৯°৫৫ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী স্থানে এ বনভুমির অবস্থান প্রায় ২০০ বছর পূর্বেও মূল সুন্দরবনের এলাকা ছিল প্রায় ১৭,০০০ বর্গ কি.মি । ক্রমে এবং সংকুচিত হয়ে প্রকৃত আয়তনের এক তৃতীয়াংশে পৌছেছে। এই বনভূমির বর্তমান আয়তন হবে প্রায় ৪ হাজার বর্গ কিমি। এর প্রায় ১৭,০০০ বর্গ কিমি জলাভূমি। গোটা সুন্দরবন দুটি বনবিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এখানে আছে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, খুলনা, চাঁদপাই এবং শরণখোলা আর ১৬ টি ফরেস্ট স্টেশন।

সুন্দরবনের উদ্ভিদ

মাটির বৈচিত্র‍্যের কারণে সুন্দরবনের উদ্ভিকূলও বৈচিত্র্যময়। এখানকার অধিকাংশ গাছপালা ম্যানগ্রোভ ধরনের। এর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষ, গুল্মলতা, ঘাস, পরগাছা ও আরোহী উদ্ভিদ সহ নানা ধরনের উদ্ভিদ। সুন্দরবনের উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, ওড়া, পশুর, ধুন্দর, বাহিন প্রভৃতি প্রধান। এগুলোর মূলত লবণাক্ত পানির বনভূমির উদ্ভিদ। এছাড়া সুন্দরবনের প্রায় সব খালের পাড়েই জন্মের নিপা পাম ও গোলপাতা।

সুন্দরবনের প্রাণী

সুন্দরবনে রয়েছে বিচিত্র ধরনের সব প্রাণী। রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও বিশ্ববিখ্যাত। এ ছাড়া এখানে রয়েছে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা ও মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বনবিড়াল, লিওপার্ড, সজারু, উদ এবং বন্য শুকর। সুন্দর বনে রয়েছে বিচিত্র প্রজাতির ৩২০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি। বক, সারস, হাড়গিলা, কাদা-খোঁচা, লেঞ্জা ও হট্টিটি এখানকার নদীনালার কিনারায় বিচরণ করে। সমুদ্র উপকূলে দেখা যায়- গাংচিল, জল কবুতর, টার্ন প্রভৃতি। এ ছাড়া চিল, ঈগল, শকুন, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, বুলবুল, শালিক, ফিঙে, ঘুঘু, বেনে বৌ, হাঁড়িচাঁচা, ফুলঝরি, মুনিয়া, টুনটুনি, দোয়েল, বাবুই প্রভৃতি পাখি সুন্দরবনের সর্বত্রই বিচরণ করে। সুন্দরবনে প্রায় ৫০প্রজাতির সরীসৃপ দেখা যায়। এর মধ্যে কুমির, সাপ, টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ, কচ্ছপ ইত্যাদি প্রধান। সাপের মধ্যে রাজগোখরা, রাসেলস ভাইপার, অজগর, ব্যান্ডেড ক্রেইট, গুঁই ও কয়েক প্রকার সামুদ্রিক সাপ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া এর নদীনালা ও অন্যান্য জলাশয়ে বাস করে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ

অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুন্দরবনের অবদান

সুন্দরবন থেকে বহু বনজ দ্রব্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আহরণ করে বাজারজাত করা হয়। সুন্দরবনের প্রাপ্ত ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষের কাঠ স্থাপনা তৈরিতে জ্বালানি হিসেবে এবং কাঠকয়লা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কিছু কিছু এলাকায় কাষ্ঠ আহরণ স্থানীয় লোকজনের এক প্রকার আয়ের উৎসও। ম্যানগ্রোভের অনেক ফল খাদ্য ও পাতা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাকল ব্যবহৃত হয় ওষুধ উৎপাদনের উৎস হিসেবে। তবে সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় সুন্দরবনের গোলপাতার ক্ষেত্রে। এ পাতায় শুকিয়ে তা ঘরের চাল বা বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এ পাতার কুচিয়ে সিদ্ধ করে পাওয়া যায় লবণ। কঁচি পাতা ব্যবহৃত হয় সিগারেটের মোড়ক হিসেবে। বড় পাতা ব্যবহার করা হয় হ্যাট, ছাতা, রেইনকোট, বাস্কেট, মাদূর এবং ব্যাগ। এছাড়া গোলপাতায় রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এছাড়া সুন্দরবনের প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদানের পরোক্ষ ব্যবহার রয়েছে। এখানে যে শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যায় তার খাবার চুনের ভালো উৎস। মধু উৎপাদন নির্ভর করে মৌমাছির উপর যা বিভিন্ন গাছের ফুল থেকে সংগ্রহীত হয়। এছাড়া বিভিন্ন নদ-নদী, নদী-নালা থেকে সংগৃহীত হয় প্রচুর মাছ এবং বাগদা চিংড়ির পোনা। সুন্দরবনের বন সম্পদকে কেন্দ্র করে কয়েকটি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে খুলনার নিউজপয়েন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলস উল্লেখযোগ্য।

সমুদ্র উপকূল রক্ষায় সুন্দরবন

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল রক্ষায় সুন্দরবনের বিশেষ অবদান রয়েছে এই বনটি বিভিন্নভাবেই সমুদ্র উপকূল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে আমাদেরকে সহায়তা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও কিন্ত অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে সঠিকভাবে সুন্দরবন রক্ষার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার অভাব এবং এবং অপরিকল্পিত বন উজারের জন্য দিন দিন সুন্দরবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছ আর এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি দেশ ও জাতির জন্য এটি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আজকে আপনাদেরকে সমুদ্র উপকূল রক্ষায় সুন্দরবনের বিশেষ অবদানগুলোর কথা জানাবো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে সমুদ্র উপকূল রক্ষায় সুন্দরবনের অবদান জেনে নেয়া যাক।
ম্যানগ্রোভ বৃক্ষের মূল পলি ধরে রাখে এবং কোন নতুন চোরের স্থিতিশীলতায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস প্রবণ। এই এলাকায় মানুষের বসতি রক্ষা ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ ও অকুতভয় প্রহরের মতো কাজ করে। তাই এই এলাকার মানুষের জীবনের অপর নাম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এছাড়াও এই এলাকার খাদ্যের মাঠে লোনা পানি প্রবেশে বাধা রূপে কাজ করে ম্যানগ্রোভ আচ্ছাদন।

সুন্দরবনের সাম্প্রতিক অবস্থা

সুন্দরবন রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদেরকে জাতীয় ভাবে আরো বেশি সচেতন এবং রক্ষণশীল হতে হবে কেননা বাংলাদেশের সুন্দরবনের সাম্প্রতিক অবস্থা যথেষ্ট নয়। আর শুধু নিজেদের সচেতনতা নয় এই বন রক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। আজকে আপনাদেরকে সুন্দরবনের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব এবং এর মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পারবেন এই বন রক্ষার জন্য আমাদের আরো কতটা সচেতন হওয়া উচিত তাহলে চলুন এবার সুন্দরবনের সম্প্রতি অবস্থার বিষয়টি আলোচনা করা যায়
১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হলেও অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পকে সম্পদ আহরণ ম্যানগ্রোভের বিস্তৃতিকে সংকুচিত করেছে এবং ধ্বংস হয়েছে এর জীববৈচিত্র‍্য। এছাড়াও ম্যানগ্রোভ বিভিন্ন প্রকার পরোক্ষ হুমকির সম্মুখীন হয়ে আছে। কৃষি কাজের জন্য নদীতে বাঁধ দেওয়া বা সেচে মাধ্যমে সাধু পানি তুলে নেওয়ার কারণে ম্যানগ্রোভে সাধু পানির প্রবাহ কম হচ্ছে এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানির উপরে উঠে আসছে। এটা ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন পৃথিবীর ৫২২তম বিশ্ব ঐতিহ্য (World Heritage) হিসেবে সুন্দরবনকে তিনটি এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে যা সুন্দরবনের মোট আয়তনের ২৩ শতাংশ। এতে করে সুন্দরবনের সংরক্ষণ কিছুটা হলেও জোরদার হবে।
মন্তব্য, সুন্দরবন হচ্ছে সমুদ্র-প্রতিবেশ ও স্থলজ প্রতিবেশের সেতু বন্ধন। বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে এর প্রত্যক্ষ ও ভুমিকা অপেক্ষা পরোক্ষা অনেক বেশি। এদেশের উপকূলীয় তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন ও আর্থসামাজিক অবস্থান সুন্দরবনের আশীর্বাদপুষ্ট। সুতরাং, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে সংরক্ষণের জন্য সচেতন ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url