বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় - বিজয় দিবসের তাৎপর্য

বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাসে বিজয় দিবস হল অত্যন্ত গৌরবপূর্ণ একটি দিন আর তাই এই দিনকে ঘিরে বাঙালি জাতির ভক্তি এবং শ্রদ্ধার কোন ঘাটতি থাকে না। আমাদের সকলের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলো এই বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় সম্পর্কে সকলকে জানানো। আর আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ও বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে জানব।

বিজয় দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদেরকে জানা উচিত মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য এবং মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ সম্পর্কে। বিজয় দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের পরবর্তী জেনারেশনকে সঠিকভাবে জানানো এটি আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সকলেরই। তাই বিজয় দিবস সম্পর্কে সকলকে সঠিকভাবে জানার জন্য আজকে আমরা বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় এবং বিজয় দিবসে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি আরো আলোচনা করব মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট এবং মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ সম্পর্কে।তাই আর দেরী না করে চলুন বিজয় দিবস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যায়।

সূচিপত্রঃ বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় - বিজয় দিবসের তাৎপর্য

মুক্তিযুধের তাৎপর্য

বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাসে একটি বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। আর এই  মুক্তিযুদ্ধের  ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য এবং বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় সম্পর্কিত এই প্রশ্নের মাধ্যমে এখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বাঙালি জাতির জীবনে যেসব দিবস রয়েছে তার মধ্যে বিজয় দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির জাতীয় জীবন্ত এক অবিস্মরণীয় আনন্দ বেদনায় শিহরিত উজ্জ্বল দিন। এই দিন আমরা দেখো নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের শেষে বিজয় লাভ করেছিলাম। এই দিনটিতে আমাদের জাতীয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১সালের এই দিনে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়। এই দিনে হাওলাদার পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রের জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র "বাংলাদেশ"। তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদার ও আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু এই বিজয়ের পেছনে রয়েছে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ২ লাখ মা বোনের ইজ্জত অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা। ৩০ লক্ষ প্রাণ ও ৫ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা যে বিজয় পেয়েছি তা বিজয় দিবস, সে বিজয় দিবস আমাদের জাতির সামনে খুলে দিয়েছে অমিত সম্ভাবনার স্বর্ণদুয়ার। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন জাতি হিসেবে মানচিত্রে স্থায়ী হয়েছিল আমাদের প্রিয় স্বদেশের। বিজয় দিবসের মাধ্যমে জাতির নবযাত্রা শুরু হয়। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। এই দিনটি একই সঙ্গে গৌরব আনন্দের। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় মর্যাদার প্রতীক। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় দিবস। কিন্তু এই দিবস একদিনে আসেনি, এজন্য আমাদের অনেক সংলাপ আন্দোলন করতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় স্বদেশ হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কাল রাতে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু হয়েছিল অনেক ত্যাগ - তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তার সফল ও গৌরবজনক সমাপ্তি হয়েছিল। এদিন আমাদের জাতীয় জীবনে একটি লাল তারিখ আমাদের বিজয় দিবস।

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট 

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় লাভের পেছনে আমাদের দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের প্রেক্ষাপট জড়িত। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ তালে প্রতিষ্ঠিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর থেকে। দেশবিভাগের ফল হিসেবে যে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, সে পাকিস্তান আমাদের দেশের মানুষকে চরম দুর্ভোগ ও দুর্যোগের দিকে ঠেলে দেয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষণ, জুলুম, নির্যাতন থেকে মুক্ত হওয়ার স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সপ্ন দেখতে থাকে। জাতি হিসেবে আমাদের ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানের প্রথমেই আঘাত আনলো আমাদের প্রিয় মাতৃভাষার ওপর। তারা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশের মানুষ। শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে পেরেছিলাম। তারপর বাঙালি ভাবতে থাকলে স্বাধিকার আন্দোলনের কথা। ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনেরই অংশ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর সরকার গঠন করতে পারেনি। তারপর ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কাল রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর পশ্চিমে হানাদার বাহিনীর বিচারে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার মধ্যে উজ্জীবিত করে উজ্জ্বল করেছিলেন "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম"।

মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ

১৯৭১ সালে ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন । এদেশের মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী। গ্রামে-গঞ্জে শহরে-বন্দরে হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে নির্বিচারে। পাখির মতো গুলি করে হত্যা করতে থাকে, মানুষ-লুণ্ঠন করে ধন-সম্পদ, আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘরবাড়ি, লুণ্ঠন করে মা-বোনেদের সম্ভ্রম ইজ্জত। মুজিবনগরের বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠিত ১৯৭১ সালে ১০ই এপ্রিল অফিসের অনেক দেশ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানায়। দেশের সর্বত্র বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা ও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ভারতের মিত্রবাহিনী এ দেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা স্বাধীনতা সংগ্রামের যোগ দেয়। তারপর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য

কোনোভাবেই ছোট-খাটো করে দেখার উপায় নেই এই বিজয় দিবসের তাৎপর্য। এ বিজয় দিবসের মাধ্যমে আমরা গৌরবময় স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। স্বপরিচয়ে মাথা তুলে বিশ্বের দরবারে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়েছিলাম। রক্ত নদীর উজান বেয়ে এসে স্বাধীনতার যুদ্ধের বিজয় আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের নিজের ভাগ্য নিজে গড়বার। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত আমাদের এই দেশ পুনর্গঠনের সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা বিজয় দিবসের মাধ্যমে। জাতির কাছে প্রতি বছর বিশেষ মর্যাদা নিয়ে এসে হাজির হয় বিজয় দিবস। আমাদের মনে রাখতে হবে যে "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা" করা অনেক কঠিন। বিজয় দিবসের শপথ হওয়া উচিত, যে কোন মূল্যে হোক আমাদেরকে আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অক্ষুন্ন রাখবো। সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠন করতে পারলে বিজয় দিবস অথবা করে তোলার সম্ভব এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য কি সেটা বোঝা সম্ভব।

বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয়

এখন আপনাদের জানাবো বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় বিষয় সম্পর্কে। কেননা  বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দেশবাসীর করণীয় সম্পর্কে  আমাদের জানতে হবে। তাই চলুন এবার জেনে নেওয়া যাকবিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয়  কি সেই বিষয়গুলো। বিজয় দিবসের শপথ নিতে হবে যে, বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়কে জাতীয় জীবনে স্থিতিশীল করে রাখার শপথ নিয়ে দেশে যাদের জন্য আমরা আমাদের কাজ করে যাবো, এটি কার্যকর করতে পারলেই এটি হবে সবচেয়ে সম্মানীয় বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় । বিজয় দিবসের চেতনাকে জাতীয় জীবনের সবর্ত্র ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের এটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বিজয় দিবসের সত্যিকারের তাৎপর্য আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হবো। আমাদের জাতীয় জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সংকট, অভাব, অনটন, অশিক্ষা, দারিদ্র দূর করে দেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই স্বাধীনতা প্রাপ্তি সকল দিক দিয়ে হবে অর্থবহ। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা এলেও অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসনি। অর্থনৈতিক মুক্তি আসলেই বিজয় দিবসের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় হিসেবে আমাদের সকলকেই তাই অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় কল্যাণের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
মন্তব্য, বিজয় দিবসকে আমরা যথাযথ মর্যাদার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে পালন করি। এ দিন আমরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি শহিদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তির, সঙ্গীত অনুষ্ঠান, নাট্যাভিনয় ইত্যাদি দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করি । এদিন আমরা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংবর্ধনারও অয়োজন করি। বিজয় দিবস আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের দিন। আনন্দের পাশাপাশি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে আমাদের যে বিজয় অর্জন করেছি, সে রক্তক্ষয়, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংগ্রাম আন্দোলনের কথা স্মরণ রেখে বিজয় দিবসের চেতনা উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় উন্নতির জন্য আমাদের সকলকে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url